Site icon Anirban Saha

এক নতুন শারদোৎসব

আমার বিশ্ববিদ্যালয়, শরৎ কালে।

যদি ফাটা রদ্দুরের মধ্যে ঠাণ্ডা লাগে, গাছের পাতা হলুদ হয়ে ঝরে পরে, ব্যাস! বুঝে যাবেন শরৎ এসে হাজির! আমাদের শহর কোলকাতায়, শরৎ কাল বেশ অনেকটাই কাল্পনিক। গল্পে শোনা বা পত্রিকায় পড়া। যত দিন না ঢাকে কাঠি পরছে, ততদিন গ্রীষ্ম, নইলে বর্ষা। এখানে একটু অন্যরকম।

শীতের পরে বসন্ত আসে। বসন্তে পুরো শহর টা বেশ একটা বড় বাগানের মতন দেখায়। গ্রীষ্মে বেশ গরম। শরৎে গাছের সবুজ পাতা হলুদ হয়ে শুকিয়ে যায়। ঝড়-দমকা হাওয়ায় সেই পাতাগুলো গাছ থেকে মাটিতে ঝরে পড়ে। অনেকে বেশ মজা পায়, পাতা তুলে নিজের কাছে রেখে দেয়। তাদের মধ্যে আমি একজন। আমার বাংলাদেশের এক বন্ধুও দেখি সেইদিন বেশ আনন্দ পেয়েছিল পাতা ঝরে পড়তে দেখে। আমরা দুই জন খালি নই, অনেকে ইন্সটাগ্রামে, অনেক হ্যাশট্যাগ দিয়ে শরৎের ছবি আপলোড করে। এই গাছের রং বদল, পাতা ঝরে পড়া, ফাটা রদ্দুরের মধ্যে কনকনে ঠাণ্ডা হাওয়া। সবার মধ্যে কারো হাতে কফি, নইলে কোলা। আর কিছু না পেলে বিয়ার। সাথে বই নইলে ল্যাপটপ। দোকানে দোকানে এখন হ্যালোউইনের তোর-জোর চলছে। শুরু হয়ে গেছে ক্রিস্টমাসের যোগান। সকালে বা বিকেলে যখন নদীর ধার দিয়ে হাটি, অনেকেই বেশ নিজের থেকে কথা বলে, ওরা এখন আমার মুখ চিনে গেছে। কখনও কেউ নিজেদের মতন করে গান বাজনা করে, নতুন কাউকে দেখলে হাসে আর জার্মান ভাষায় কথা বলে। সব মিলিয়ে বেশ একটা আনন্দ উৎসবের আবহাওয়া।

শরতের আগমন || www.anirbansaha.com

ঝরে পড়া পাতা।

শরতে রাস্তা আর চার মাথার মোর।

শরৎ কালের বাগানের ছবি।

শরতে হাটার রাস্তা ।

এই উৎসবে শামিল মধু, শাহরুখ খানের মতন হাত বারিয়ে।

আর এ সবার মধ্যে, আমি বাঙালি। আমাদের শারদোৎসব বলতে কাশ ফুল, আকাশে ছড়ানো মেঘ, দুর্গা পূজা। তার সাথে অবশ্যই বন্ধু-বান্ধব-পরিবারের সাথে সময় কাটানো, আড্ডা, নতুন জামা কাপড় আর খাওয়া-দাওয়া। এখানে ভারতীয় বাঙালির সংখ্যা ১৫’র চেয়েও কম। আমার মতন একটা কি দুটো গাধা আছে, বাকি সবাই খুব মন দিয়ে পড়াশোনা করে, ক্লাস ছাড়া ওদের মুখ ঠিক দেখা যায় না। উৎসবে যোগ দেওয়া অনেক দূর। তো, হ্যা। সব থেকে কাছে যে পুজো হয়, সেটা আমার বাড়ি থেকে প্রায় দের ঘণ্টা দূরে। পাঁচ দিন না পারলেও, একটা দিন সময় করে চলে গেলাম।

বার্লিনের দুর্গা পূজা চল্লিশ বছরের পুড়নো। ছাত্রদের আবাসনে বেশ ছোট করে এই পূজা হয়। মূর্তি টা আমার থেকেও ছোট সাইজে। কিন্তু আন্তরিকতায় কোন কমতি নেই। পৌছনোর পর থেকেই আমি একটু একটু কাজ করতে শুরু করি – ফল কাটা, নৈবেদ্য দেওয়া ইত্যাদি। কিছু সময়ের মধ্যে দেখি, আমি বেশ ভালো ভাবেই যুক্ত হয়ে পড়েছি। কাঁসর বাজানো থেকে শুরু করে, ধুনো দেওয়া। এসব আমি কোলকাতায়ে থাকাকালীন কোন দিন করিনি। এটাও একটা নতুন অভিজ্ঞতা।

বার্লিনের দুর্গা পুজার প্রাঙ্গনে, আমি ধুতি পরে হাজির।

আমি ৩ বন্ধু আনলাম। এক এক জন আরও ৩ জন। এরকম করে আমাদের আড্ডা সারা রাত চলল।

আমার সাথে গেছিল মধু ও অপ্রতিম। বার্লিনে থাকে মনামি। বুদাপেস্ট থেকে চলে এসেছিল ইতিলেখা। এরা দুইজনেই আমার আগের কলেজের পরিচিত। অনুপলের বার্লিন আসার কথা ছিল এক দিন পরে। ও প্যারিস থেকে ঠিক সময় মতন চলে আসে। অনুপল আমার বন্ধু হয়েছিল ছবি তোলার সূত্রে, প্রায় ৮ বছর আগে। আমি ভাবিনি যে এরা, সবাই এত ভালো ভাবে মিশে যাবে। ওইখানেও কিছু বন্ধু পাতালাম। সবাই সবার বন্ধুদের ডেকে আনল। বেশ জমিয়ে আড্ডা হল। আমি ভাবিনি মধু এত কথা বলবে সবার সাথে। সেইদিন আর ফেরা হয়েনি। সারা রাত খাওয়া দাওয়া আর আড্ডা হয়েছে। এই অভিজ্ঞতাও আমার জীবনে নতুন। সব মিলিয়ে মিশিয়ে খুব নতুন আমার এই বারের শারদোৎসব।

নবমীর আরতি।

বার্লিনের দুর্গা ঠাকুর।

Exit mobile version